বিশেষ প্রতিনিধি ঃ-
মেহেরপুরে আগাম গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে কৃষকদের বাজিমাত
জেলায় এবছর সর্বোচ্চ পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলায় এবার ৫হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। জমিতে পেঁয়াজের অধিক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর থেকে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় এ জেলার কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়েছে।
কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল অনেক বেশি। মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষকেরা গত এক যুগের মধ্যে এই প্রথম লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এরই মধ্যে নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এতে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
চাষিরা জানান, সারা বছর পেঁয়াজের দাম ছিল। যখন কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। ঠিক তখনই পেঁয়াজের বাজার পড়ে গেল। সরকারকে অবশ্যই একটি দাম বেঁধে দেওয়া উচিত। তা না হলে আগামী বছর আর কেউ পেঁয়াজ চাষ করতে আগ্রহী হবেন না।
জেলার কেদারগঞ্জ, নাজিরাকোনা, গোভিপুর, উজলপুর, বন্দরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মাসে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৫০ টাকা। পৌর শহরের বড়বাজারের কাঁচাবাজারে নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা বাজারে ৪০টাকা কেজি, পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা দরে কেনাবেচা চলছে। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশী পেঁয়াজ চাষ হয়। মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জের মাঠে দেখা যায় কৃষকরা জমি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ শুরু করেছেন।
সবজি ব্যবসায়ী মতলেব হোসেন বাসসকে বলেন, পাইকারি ও খুচরা কেনাবেচাতে ৫ থেকে ১০ টাকার পার্থক্য থাকে। একসঙ্গে পুরো জেলার পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় দাম কমে এসেছে।
সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি বছরে ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এবারে সারের সংকট ছিল। বীজের দামও পড়েছে বেশি। আবহাওয়াও ভালো ছিল না। এরপরও পেঁয়াজ মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম পড়ে গেছে। লোকসানের হিসাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিঘা প্রতি মজুরি খরচ, সার ও কীটনাশক, বীজ কেনা দিয়ে মোট ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানী বন্ধ না হলে চাষীরা লোকসানের মুখে পড়বে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, এখনও পেঁয়াজ পরিপক্ক হয়নি। তারপরেও কৃষক একই জমিতে আরেকটি ফসল আবাদ করার জন্য পেঁয়াজ তুলে ফেলছে। তাতে করে উৎপাদন লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে না। পরিপক্ক পেঁয়াজ তুললে কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায়। আর পেঁয়াজের মৌসুম চলে গেলে বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়।